বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৪৬ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম
চাঁপাইনবাবগঞ্জের দেবীনগর বাসির মানববন্ধন অনুষ্ঠিত ময়মনসিংহের ভালুকায় হাইওয়ে পুলিশের ওপেন হাউজ ডে অনুষ্ঠিত বিএসটিআই’র যৌথ অভিযানে দুই প্রতিষ্ঠানের জরিমানা নোয়াখালীতে যুবককে গুলি করে হত্যা, গ্রেপ্তার-৩ চাঁপাইনবাবগঞ্জে ডিবি পুলিশের অভিযানে ইয়াবাসহ ১ জন আটক গোবিন্দগঞ্জে বাড়ীতে হামলা ও বাবা-মাকে মারধর করে এসএসসি পরীক্ষার্থীকে অপহরণ, ৩ ঘন্টা পর উদ্ধার, মূল অভিযুক্ত সঞ্চয় গ্রেফতার নওগাঁর পোরশায় ৮ম শ্রেনীর ছাত্রীকে পালাক্রমে গণধর্ষণের মামলায় দুইজন যুবককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার অভিযানে চুরি হওয়া গরুসহ দুই চোর গ্রেফতার  পুলিশ সপ্তাহ-২০২৫ উপলক্ষে মৌলভীবাজার জেলা পুলিশের ভার্চুয়াল অংশগ্রহণ মেহেরপুরে নিম্ন আদালতের দলবাজ ও দুর্নীতিবাজ বিচারকদের অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন

১৫ই শাবান : লাইলাতুল বরাত ! কিছু কথা

১৫ই শাবান অর্থাৎ ১৪ই শাবান দিবাগত রাত। হাদীস শরীফে এ রাতকে ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শাবান’ বলা হয়েছে। এর ব্যাপারে সঠিক ও ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান  হল, এ রাতের ফযীলত সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। সম্মিলিত কোনো রূপ না দিয়ে এবং এই রাত উদযাপনের বিশেষ কোনো পন্থা উদ্ভাবন না করে বেশি ইবাদত করাও নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়াত দ্বারা প্রমাণিত। এই রাতকে অন্য সব সাধারণ রাতের মত মনে করা এবং এ রাতের ফযীলতের ব্যাপারে যত হাদীস এসেছে তার সবগুলোকে ‘মওযূ’ বা ‘যয়ীফ’ মনে করা যেমন ভুল তেমনি এ রাতকে শবে কদরের মত বা তার চেয়েও বেশি ফযীলতপূর্ণ মনে করাও একটি ভিত্তিহীন ধারণা। বাড়াবাড়ি ছাড়াছাড়ি কোনটিই উচিত নয়। যতটুকু ফযীলত প্রমাণিত এ রাতকে ততটুকুই গুরুত্ব দেওয়া উচিত এবং এ কেন্দ্রিক সকল রসম-রেওয়াজ পরিহার করা উচিত।

এ রাত ও তার আমল সম্পর্কে হাদীসের নির্ভরযোগ্য বর্ণনা নিম্নরূপ :

১.

عن مالك بن يخامر عن معاذ بن جبل عن النبي صلى الله عليه وسلم قال : يطلع الله إلى خلقه فيليلة النصف من شعبان فيغفر لجميع خلقه إلا لمشرك أو مشاحن، رواه ابن حبان وغيره ورجاله ثقاتوإسناده متصل على مذهب مسلم الذي هو مذهب الجمهور في المعنعن ولم يجزم الذهبي بأنمكحولا لم يلق مالك بن يخامر كما زعم وإنما قاله على سبيل الحسبان، راجع : سير أعلام البلاء.

মুআয ইবনে জাবাল রা. বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘‘আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে (শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির প্রতি (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত আর সবাইকে মাফ করে দেন।’’- সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস ৫৬৬৫

এই হাদীস দ্বারা প্রমাণ হচ্ছে যে, এ রাতে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে রহমত ও মাগফেরাতের দ্বার ব্যাপকভাবে উন্মুক্ত হয়। কিন্তু শিরকী কাজকর্মে লিপ্ত ব্যক্তি এবং অন্যের ব্যাপারে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী মানুষ এই ব্যাপক রহমত ও সাধারণ ক্ষমা থেকেও বঞ্চিত থাকে।

হাদীসটির সনদ সহীহ। এজন্যই ইমাম ইবনে হিববান একে ‘কিতাবুস সহীহ’এ বর্ণনা করেছেন। কেউ কেউ হাদীসটিকে পারিভাষিক দৃষ্টিকোণ থেকে ‘হাসান’ বলেছেন; কিন্তু হাসান হাদীস সহীহ তথা নির্ভরযোগ্য হাদীসেরই একটি প্রকার।

ইমাম মুনযিরী, ইবনে রজব, নূরুদ্দীন হাইসামী, কাসতাল্লানী, যুরকানী এবং অন্যান্য হাদীস বিশারদ এই হাদীসটিকে আমলযোগ্য বলেছেন। দেখুন, আততারগীব ওয়াততারহীব ২/১১৮, ৩/৪৫৯; লাতায়েফুল মাআরিফ ১৫১; মাজমাউয যাওয়াইদ ৮/৬৫; শরহুল মাওয়াহিবিল লাদুন্নিয়্যা ১০/৫৬১

বর্তমান সময়ের প্রসিদ্ধ শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী রাহ. ‘‘সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহীহা’’ ৩/১৩৫-১৩৯-এ এই হাদীসের সমর্থনে আরো আটটি হাদীস উল্লেখ করার পর লেখেন-

وجملة القول أن الحديث يمجموع هذه الطريق صحيح بلا ريب والصحة تثبت بأقل منها عددا ما دامتسالمة من الضعف الشديد كما هو الشأن في هذا الحديث.

‘‘এ সব রেওয়ায়াতের মাধ্যমে সমষ্টিগতভাবে এই হাদীসটি নিঃসন্দেহে সহীহ প্রমাণিত হয়।’’ এরপর শায়খ আলবানী রাহ. ওই সব লোকের বক্তব্য খন্ডন করেন যারা কোনো ধরনের খোঁজখবর ছাড়াই বলে দেন যে, শবে বরাতের ব্যাপারে কোনো সহীহ হাদীস নেই।

২. ‘‘হযরত আলা ইবনুল হারিস রাহ. থেকে বর্ণিত, আয়েশা রা. বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে নামাযে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সেজদা করেন যে, আমার ধারণা হল তিনি হয়ত মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি উঠে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামায শেষ করলেন তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা অথবা বলেছেন, ও হুমাইরা, তোমার কি এই আশংকা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না, ইয়া রাসূলুল্লাহ। আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার আশংকা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কিনা। নবীজী জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জান এটা কোন্ রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন ইরশাদ করলেন-

هذه ليلة النصف من شعبان إن الله عز وجل يطلع على عباده في ليلة النصف من شعبان فيغفرللمستغفرين ويرحم المسترحمين ويؤخر أهل الحقد كما هم.

‘‘এটা হল অর্ধ-শাবানের রাত। (শাবানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত।) আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে তাঁর বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন এবং ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহপ্রার্থীদের প্রতি অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই।’’-শুয়াবুল ঈমান, বাইহাকী ৩/৩৮২-৩৮৩

ইমাম বাইহাকী রাহ. এই হাদীসটি বর্ণনার পর এর সনদের ব্যাপারে বলেছেন-

هذا مرسل جيد

এই হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়, এ রাতে দীর্ঘ নফল নামায পড়া, যাতে সেজদাও দীর্ঘ হবে, শরীয়তের দৃষ্টিতে কাম্য। তবে মনে রাখতে হবে যে, অনেক অনির্ভরযোগ্য ওযীফার বই-পুস্তকে নামাযের যে নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন লেখা আছে অর্থাৎ এত রাকাআত হতে হবে, প্রতি রাকাআতে এই সূরা এতবার পড়তে হবে-এগুলো ঠিক নয়, হাদীস শরীফে এসব নেই; এগুলো মানুষের মনগড়া পন্থা। সঠিক পদ্ধতি হল, নফল নামাযের সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী দুই রাকাআত করে যত রাকাআত সম্ভব হয় এবং যে সূরা দিয়ে সম্ভব হয় পড়তে থাকা। কুরআন কারীম তেলওয়াত করা। দরূদ শরীফ পড়া। ইসতেগফার করা। দুআ করা এবং কিছুটা ঘুমানোর প্রয়োজন হলে ঘুমানো। এমন যেন না হয় যে, সারা রাতের দীর্ঘ ইবাদতের ক্লান্তিতে ফজরের নামায জামাআতের সাথে পড়া সম্ভব হল না।

সংবাদটি শেয়ার করুন :

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত